হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে আমরা জানবো, হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগ আজকের সময়ের অন্যতম প্রধান স্বাস্থ্য সমস্যা।বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনিয়মিত জীবনযাপন ও খারাপ অভ্যাসই এর কারণ হয়ে থাকে।সঠিক যত্ন ও সচেতনতা থাকলে হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ সম্ভব।সুস্থ জীবনযাপনের মাধ্যমে হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখা জরুরি।
ভূমিকা
হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচার উপায় এর জন্য প্রয়োজন স্বাস্থ্যকর খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম ও স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ।ধূমপান ও অতিরিক্ত অ্যালকোহল এড়িয়ে চলাও জরুরি একটি পদক্ষেপ।রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত।এইসব অভ্যাস হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করে।
১।সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন
সুষম খাদ্য মানে এমন খাদ্য, যা শরীরের প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে।এতে প্রোটিন, ভিটামিন, চর্বি, কার্বোহাইড্রেট ও খনিজ উপাদান থাকে সঠিক পরিমাণে।এই খাদ্য শরীর গঠনে সহায়তা করে এবং সুস্থ জীবন নিশ্চিত করে।ইহা হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচার উপায় এর মধ্যে অন্যতম।
সুষম খাদ্য দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং দুর্বলতা দূর করে।শিশুদের বেড়ে ওঠা ও শিক্ষায় মনোযোগ ধরে রাখতে এটি খুব প্রয়োজনীয়।বয়স্কদেরও সুষম খাদ্য গ্রহণে স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং রোগ কম হয়।
প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় শাকসবজি, ফল, মাছ, দুধ ও ডাল রাখা উচিত।সাথে প্রচুর পানি পান এবং অতিরিক্ত তেল-চিনি এড়িয়ে চলা দরকার।সুষম খাদ্য গ্রহণে শরীর ও মন দুটোই থাকে সতেজ ও প্রাণবন্ত।
২।নিয়মিত ব্যায়াম করুন
নিয়মিত ব্যায়াম হৃদপিণ্ডকে শক্তিশালী ও কার্যকর রাখে।এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে।ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।
ব্যায়াম দেহের অতিরিক্ত চর্বি ও কোলেস্টেরল কমায়।এতে রক্তনালিতে ব্লক হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পায়।এটি হৃদরোগ প্রতিরোধে এক কার্যকর উপায় হিসেবে কাজ করে।
প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটা, সাইক্লিং বা হালকা দৌড় উপকারী।এই অভ্যাস শরীরকে সক্রিয় ও প্রাণবন্ত রাখে।নিয়মিত ব্যায়াম করলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাই এড়ানো যায়।ইহা হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচার উপায়
৩।ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য এড়িয়ে চলুন
ধূমপান হৃদপিণ্ডের রক্তনালিকে সংকুচিত করে তোলে।এতে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হয় এবং অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়।এই অবস্থায় হৃদপিণ্ডের ওপর চাপ বাড়ে এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে।তাই সুস্থ হৃদয়ের জন্য ধূমপান বর্জন করা প্রয়োজন।
তামাকজাত দ্রব্যে থাকা নিকোটিন ও টক্সিন রক্তে কোলেস্টেরল বাড়িয়ে তোলে।এগুলি ধমনিতে প্লাক জমিয়ে ব্লক তৈরি করে।ফলে হৃদপিণ্ডে রক্ত সরবরাহ ব্যাহত হয় এবং হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বাড়ে।এই জন্য তামাকজাত পণ্য সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলাই উত্তম।
ধূমপান না করলে শুধু নিজে নয়, পাশের মানুষও নিরাপদ থাকে।প্যাসিভ স্মোকিং-ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।তামাক বর্জন করলে শ্বাসপ্রশ্বাস ভালো থাকে ও হৃদপিণ্ড সুস্থ থাকে।তাই সুস্থ জীবন গড়তে আজই ধূমপান ও তামাক ছাড়ুন।
৪।রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন
উচ্চ রক্তচাপ হৃদপিণ্ডে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।এতে রক্তনালির দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায় এবং ধমনী সরু হয়।ফলে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয় এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখলে হৃদরোগ প্রতিরোধ করা সহজ হয়।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে লবণ কম খাওয়া জরুরি।সাথে ওজন নিয়ন্ত্রণ, মানসিক চাপ কমানো এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম দরকার।নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করে সচেতন থাকা উচিত।এই অভ্যাস হৃদরোগের আগেই সতর্কবার্তা দেয়।
নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম খাদ্য ও ধূমপান পরিহার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়া প্রয়োজন হতে পারে।নিজেকে সুস্থ রাখতে দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে।রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ মানেই হৃদয়কে নিরাপদ রাখা।
৫।ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন
ডায়াবেটিস থাকলে হৃদরোগের ঝুঁকি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হয়।রক্তে অতিরিক্ত শর্করা রক্তনালিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।ফলে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হয় এবং হৃদপিণ্ডে চাপ পড়ে।ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখলে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা অনেক কমে যায়।
সঠিক খাদ্যতালিকা ও নিয়মিত ব্যায়াম ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।চিনি, মিষ্টি ও পরিশোধিত খাবার কম খেতে হবে।প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ওষুধ বা ইনসুলিন গ্রহণ জরুরি।রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিত।
ডায়াবেটিস থাকলে শুধু চোখ বা কিডনি নয়, হার্টও আক্রান্ত হতে পারে।তাই হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখতে ডায়াবেটিসকে অবহেলা করা যাবে না।জীবনযাত্রায় নিয়ন্ত্রণ ও সচেতনতা এই রোগ মোকাবেলায় সহায়ক।ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ মানেই হৃদরোগ প্রতিরোধের বড় পদক্ষেপ।
৬।ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
অতিরিক্ত ওজন হৃদপিণ্ডের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে।এতে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরলের ঝুঁকি বাড়ে।এই সমস্যাগুলো সরাসরি হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে।তাই সুস্থ হৃদয়ের জন্য ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত জরুরি।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সুষম খাদ্য ও নিয়মিত ব্যায়াম অপরিহার্য।প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত তেল ও চিনি কম খেতে হবে।দিনে অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা ও শারীরিক পরিশ্রম সহায়ক।এই অভ্যাস হৃদরোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
নিজের বয়স ও উচ্চতার অনুপাতে ওজন ঠিক রাখা উচিত।BMI (বডি মাস ইনডেক্স) নিয়মিত পরিমাপ করে সতর্ক থাকা ভালো।ওজন বেড়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।ওজন নিয়ন্ত্রণ মানেই হৃদয়কে সুস্থ ও ঝুঁকিমুক্ত রাখা।
৭।স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কমান
অতিরিক্ত মানসিক চাপ হৃদপিণ্ডের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।চাপের কারণে রক্তচাপ বেড়ে গিয়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে।চিন্তা, উদ্বেগ ও হতাশা হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকারিতা ব্যাহত করে।তাই মানসিক প্রশান্তি হৃদরোগ প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
স্ট্রেস কমাতে মেডিটেশন, প্রার্থনা বা নিয়মিত বিশ্রাম নেওয়া দরকার।হালকা ব্যায়াম ও যোগব্যায়ামও মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক।নিজের ভালো লাগার কাজ করা ও পরিবারে সময় কাটানো উপকারী।এই অভ্যাসগুলো হৃদয়কে রাখে শান্ত ও সুস্থ।
চাপ থাকলে তা চেপে না রেখে কাউকে বলা বা পরামর্শ নেওয়া উচিত।পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনে ভারসাম্য বজায় রাখা প্রয়োজন।যথাযথ ঘুম ও পুষ্টিকর খাদ্যও মানসিক স্বাস্থ্যে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।স্ট্রেস কমিয়ে জীবনযাপন করলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকটাই হ্রাস পায়।
৮।পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন
পর্যাপ্ত ঘুম শরীর ও মনকে বিশ্রাম দেয় এবং পুনর্নবীকরণ ঘটায়।ঘুম না হলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে যা হৃদরোগের কারণ হতে পারে।অল্প ঘুম হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে ও হৃদপিণ্ড দুর্বল করে।সুস্থ থাকার জন্য প্রতিরাতে অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম জরুরি।
নিয়মিত ঘুমের অভ্যাস হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।ঘুমের ঘাটতি থাকলে শরীরে স্ট্রেস হরমোনের পরিমাণ বাড়ে।ফলে রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।এই কারণগুলো হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাকে ত্বরান্বিত করে।
ঘুমের পরিবেশ শান্ত ও আরামদায়ক রাখা উচিত।স্মার্টফোন, টিভি ও অন্যান্য স্ক্রিন থেকে দূরে থাকাই ভালো।ঘুমের নিয়মিত সময় নির্ধারণ করলে শরীরের ঘুমের রুটিন ঠিক থাকে।পর্যাপ্ত ঘুম হার্ট সুস্থ রাখতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
৯।অ্যালকোহল পরিহার করুন
অতিরিক্ত অ্যালকোহল হৃদপিণ্ডের কাজকে বাধাগ্রস্ত করে।এটি রক্তচাপ বৃদ্ধি করে এবং হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক করে তোলে।অ্যালকোহল কার্ডিয়াক মাংসপেশিকে দুর্বল করে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়।তাই হৃদয় সুস্থ রাখতে অ্যালকোহল পরিহার করা প্রয়োজন।
অ্যালকোহল লিভারের ক্ষতি ঘটায়, যা রক্তে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে বাধা দেয়।এতে রক্তনালীর দেয়াল শক্ত হয়ে ধমনির সংকোচন ঘটে।ফলে হার্টে রক্ত সরবরাহ ব্যাহত হয় এবং হৃদরোগের আশঙ্কা বাড়ে।
সুস্থ জীবন যাপনের জন্য অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকা জরুরি।
মৃদু মাত্রায় অ্যালকোহলও কিছু মানুষকে ক্ষতি করতে পারে।বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা উচিত।অ্যালকোহল ছাড়া জীবন শরীর ও মনের জন্য অনেক ভালো হয়।হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচতে অ্যালকোহল পরিহার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
১০।নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা হৃদরোগের ঝুঁকি নির্ণয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও শর্করার মাত্রা নিয়মিত পরিমাপ করা উচিত।প্রারম্ভিক অবস্থায় সমস্যাগুলো চিহ্নিত করলে সহজে চিকিৎসা সম্ভব হয়।এইভাবে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা অনেক কমানো যায়।
ডাক্তারি পরামর্শ নিয়ে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষায় সচেতন থাকা দরকার।যদি কোনও সমস্যা দেখা দেয়, তবে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া উচিত।এতে গুরুতর হৃদরোগের উন্নতি ও জটিলতা এড়ানো যায়।সুস্থ থাকার জন্য সময়মতো পরীক্ষা করানো একান্ত প্রয়োজন।
স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াও জীবনযাত্রায় সুস্থ অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি।সুষম খাদ্য, ব্যায়াম ও মানসিক শান্তি বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।নিজের শরীরের প্রতিটি সংকেত মনোযোগ দিয়ে শুনুন।নিয়মিত পরীক্ষা করিয়ে হার্ট অ্যাটাক থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখুন।
মন্তব্য
পরিশেষে আমরা বলতে পারি, হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচার জন্য সচেতনতা এবং সঠিক জীবনযাপন অপরিহার্য। নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম খাদ্য এবং মানসিক চাপ কমানো হৃদরোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করলে হার্টের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। তাই আমাদের উচিত স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গ্রহণ করে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমানো।
আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url