পি আর পদ্ধতি কী? পি আর পদ্ধতির উপকারিতা

পি আর পদ্ধতি কী পি আর পদ্ধতি বলতে বোঝানো হয় Proportional Representation বা অনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি। এটি একটি ভোটিং বা নির্বাচন পদ্ধতি, যেখানে ভোটের অনুপাতে প্রার্থীরা বা রাজনৈতিক দলগুলো আসন পায়।

Proportional Representation (পি আর) পদ্ধতি কী?

এই পদ্ধতিতে, যে দলের যত শতাংশ ভোট, তারা সেই অনুপাতে সংসদে বা নির্বাচিত সংস্থায় আসন পায়।
ধরা যাক, একটি সংসদে ১০০টি আসন আছে।
৩টি দল ভোটে অংশ নিয়েছে:
১। দল A পেয়েছে ৫০% ভোট → তারা পাবে প্রায় ৫০টি আসন

২। দল B পেয়েছে ৩০% ভোট → তারা পাবে প্রায় ৩০টি আসন

৩। দল C পেয়েছে ২০% ভোট → তারা পাবে প্রায় ২০টি আসন

এতে ছোট দলগুলোরও প্রতিনিধি পাঠানোর সুযোগ থাকে।

পি আর পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য

১।ভোটের ন্যায্য প্রতিফলন ঘটে– জনমতের সঠিক প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায়।

২।ছোট দলগুলোর সুযোগ থাকে – সংখ্যাগরিষ্ঠ না হয়েও তারা প্রতিনিধিত্ব পায়।

৩।জোট সরকার তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি – কারণ এককভাবে কেউ সংখ্যাগরিষ্ঠ না-ও হতে পারে।

৪।সংখ্যালঘু বা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আওয়াজ শোনা যায়।


পি আর পদ্ধতির উপকারিতা

১।ভোটের ন্যায্য প্রতিফলন ঘটেঃ জনগণের যে অনুপাতে ভোট, দলগুলো সেই অনুপাতে আসন পায়। এতে ভোটের কোনো অপচয় হয় না।নির্বাচনে পি আর পদ্ধতিতে ভোটের ন্যায্য প্রতিফলন ঘটে, কারণ জনগণের দেওয়া ভোটের অনুপাতে দলগুলো আসন পায়। এতে কোনো ভোট অপচয় হয় না এবং ভোটদাতারা অনুভব করেন যে তাঁদের কণ্ঠস্বর মূল্যায়িত হয়েছে। এই পদ্ধতি গণতান্ত্রিক ন্যায্যতা নিশ্চিত করে।

 পি আর পদ্ধতির উপকারিতা হল এভাবে নির্বাচনে ছোট দলগুলোও ন্যায্যভাবে আসন পায়, যদিও তারা সংখ্যায় কম ভোট পেয়েছে। এতে সংসদে বৈচিত্র্যময় মতামতের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়। ফলে সরকার গঠনে একটি ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হয়।

২।ছোট দল ও সংখ্যালঘুদের সুযোগ বৃদ্ধি পায়ঃ এই পদ্ধতিতে বড় দলের একচ্ছত্র আধিপত্য হয় না, ফলে ছোট দল ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর শোনা যায়।পি আর পদ্ধতিতে ছোট দলগুলোও ন্যায্যভাবে আসন পাওয়ার সুযোগ পায়, যদিও তাদের ভোটের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম। এতে বড় দলের একক আধিপত্য কমে যায়। রাজনৈতিক ভারসাম্য ও বহুত্ববাদ টিকে থাকে।

পি আর পদ্ধতির উপকারিতা হল সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর জাতীয় পর্যায়ে প্রতিফলিত হয়। তারা ভোট দিয়ে তাদের পছন্দের প্রতিনিধিকে সংসদে পাঠাতে পারে। এতে তাদের চাহিদা ও সমস্যার দিকটি গুরুত্ব পায়।

এই পদ্ধতির ফলে সমাজের সকল স্তরের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়। রাজনৈতিক ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ বাড়ে এবং ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্র গড়ে ওঠে।

৩।প্রতিনিধিত্ব বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়ঃ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা, জাতিগোষ্ঠী ও গোষ্ঠীর মানুষ প্রতিনিধি হিসেবে সুযোগ পায়।পি আর পদ্ধতিতে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি, গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের মানুষ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। এতে শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়, সংখ্যালঘুদেরও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়। ফলে সংসদ বা পরিষদ হয় বৈচিত্র্যপূর্ণ।

পি আর পদ্ধতির উপকারিতা হল নারী, আদিবাসী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তাদের কণ্ঠস্বর প্রকাশের সুযোগ পায়। তারা সহজেই রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে পারে। এতে নীতিনির্ধারণে সকলের মতামত প্রতিফলিত হয়।

এই অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিনিধিত্ব গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে তোলে। সব শ্রেণির মানুষের সমস্যা ও দাবি গুরুত্ব পায়। ফলে সবার জন্য ন্যায্য ও টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হয়।

৪।ভোটারদের উৎসাহ বাড়েঃ মানুষ জানে যে তাদের ভোট নষ্ট হবে না, তাই অংশগ্রহণ বাড়ে।পি আর পদ্ধতিতে ভোটাররা জানে, তাদের প্রতিটি ভোটের মূল্য আছে। যেহেতু ভোটের অনুপাতে আসন বরাদ্দ হয়, তাই ভোট হারানোর ভয় থাকে না। এতে জনগণ ভোট দিতে আগ্রহী হয়।

এই পদ্ধতিতে ছোট দলের ভোটও গুরুত্ব পায়, যা অনেক ভোটারকে উৎসাহিত করে। যারা সাধারণত ভোট দেন না, তারাও অংশগ্রহণে আগ্রহী হন। ফলে ভোটার উপস্থিতি বাড়ে।

ভোটের ন্যায্য ফলাফল ভোটারদের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি করে। তারা মনে করে, ভোট দিলেই পরিবর্তন সম্ভব। এতে গণতান্ত্রিক চর্চা শক্তিশালী হয়।

৫।রাজনৈতিক মতবিরোধ হ্রাস পায়ঃ যেহেতু জোট সরকার গঠনের প্রয়োজন হয়, তাই দলগুলোর মধ্যে আলোচনার সংস্কৃতি বাড়ে।পি আর পদ্ধতিতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া কঠিন হওয়ায় দলগুলোকে একসাথে কাজ করতে হয়। এতে জোট সরকার গঠনের প্রয়োজন পড়ে। ফলে আলোচনা ও সমঝোতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

এই পদ্ধতিতে সব দলের প্রতিনিধিত্ব থাকে বলে কেউই নিজেকে উপেক্ষিত মনে করে না। এতে বিরোধ কমে যায় এবং সহনশীলতা বাড়ে। রাজনৈতিক সম্প্রীতি বজায় থাকে।

বিভিন্ন মত ও বিশ্বাস একসাথে কাজ করার সুযোগ পায়। এতে উগ্রপন্থা ও হিংসাত্মক রাজনীতি কমে আসে। গণতান্ত্রিক ঐক্য ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা পায়।

৬।গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী হয়ঃ জনমতের প্রকৃত প্রতিফলন ঘটে, ফলে সরকার জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব করে।পি আর পদ্ধতিতে জনগণের ভোটের সঠিক প্রতিফলন ঘটে, যা গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি। প্রতিটি ভোট গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় মানুষ ভোটে অংশগ্রহণে আগ্রহী হয়। এতে গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পায়।

সব দল ও গোষ্ঠীর প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ পায়। এতে রাজনৈতিক বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত হয়। ফলাফল জনগণের মতামতের প্রকৃত প্রতিচ্ছবি হয়।

সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের কণ্ঠস্বর সংসদে পৌঁছে যায়। এতে নীতিনির্ধারণে বৈচিত্র্যপূর্ণ মতামত গুরুত্ব পায়। সিদ্ধান্তগুলো আরও গণমুখী ও গ্রহণযোগ্য হয়।

যেহেতু রাজনৈতিক সহনশীলতা বাড়ে, তাই রাজনৈতিক সহিংসতা ও সংঘাত কমে যায়। সরকার ও বিরোধী দল একসাথে কাজ করতে শেখে। এর ফলে গণতন্ত্র হয় আরও টেকসই ও শক্তিশালী।

পি আর পদ্ধতির কিছু সীমাবদ্ধতা

১।সরকার গঠন জটিল হতে পারে।

২।অনেক সময় দুর্বল বা অস্থির জোট সরকার হয়।

৩।প্রত্যক্ষ অঞ্চলের সঙ্গে প্রতিনিধিত্বের সম্পর্ক দুর্বল হতে পারে।

পি আর পদ্ধতি একটি ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন পদ্ধতি, যেখানে প্রতিটি ভোটের মূল্য থাকে। এটি ছোট দল ও সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে। ফলে গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী ও কার্যকর হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url